কম্পিউটার কুলিং সিস্টেম

কম্পিউটার কে তার কার্যকার তাপমাত্রায় রাখতে হলে, কম্পিউটার চলার সময় যে অতিরিক্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন হয় তা বের করে দেয়া খুবই জরুরি। এতে  কম্পিউটারের আয়ুস্কাল যেমন বাড়বে, তেমনি ভাবে কম্পিউটার এর কাজ করার ক্ষমতাও বাড়বে। কম্পিউটারের মধ্যে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তা বের করে দেয়ার জন্য কম্পিউটারের নিজস্ব কুলিং সিস্টেম আছে, যাকে স্টক কুলিং সিস্টেম বলা হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, আমরা আমাদের কম্পিউটার কে যখন খুব বেশি লোড দেই, তখন কম্পিউটার এর নিজস্ব স্টক কুলিং সিস্টেম কম্পিউটার কে সম্পূর্ন ভাবে ঠান্ডা করতে পারে না। এর জন্য স্টক কুলিং সিস্টেম এর বাহিরেও আরো বিভিন্ন ধরনের কুলিং সিস্টেমের দরকার হয়।

কম্পিউটারের মধ্যে সাধারনত, প্রসেসর, চিপসেট, গ্রাফিক্স কার্ড, RAM ও  হার্ড ডিস্ক, এগুলোই তাপ উৎপন্ন করে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ কম্পিউটারের বায়োসে এমন একটি প্রোগ্রাম দেওয়া থাকে, যার কাজ হচ্ছে, কম্পিউটার এর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে লাগলেই তা কম্পিউটার ইউজার কে অ্যালার্ম দিয়ে জানিয়ে দেয়।

কম্পিউটারে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হয় যে যে কারনে

১) আমাদের কম্পিউটার এ যে সমস্ত কম্পনেন্ট গুলো তাপ উৎপন্ন করে, সেগুলোর সাথে সাধারনত হিট সিঙ্ক লাগানো থাকে।আবার যে সমস্ত হার্ডওয়্যার গুলো খুব বেশি তাপ উৎপন্ন করে, তাদের হিট সিঙ্ক এর সাথে ফ্যানও লাগানো থাকে। এখন, কোন কারনে যদি হিট সিঙ্ক এ ধুলো বালি জমে যায়, অথবা ধুলো-বালির জন্য হিট সিঙ্ক এ লাগানো ফ্যান টি ভালো ভাবে না ঘুরতে পারে, তবে কম্পনেন্ট গুলো থেকে তাপ সম্পূর্ন ভাবে বের হয়ে যেতে পারে না। এর ফলে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন।

২) অনেক সময়, আমরা আমাদের কম্পিউটার এর কেস টাকে এমন জায়গায় রাখি, যেখানে সঠিক পরিমান ঠান্ডা বাতাস চলাচল করতে পারে না। আবার অনেক সময় কম দামি কম্পিউটার কেস এর জন্যও বাতাস চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৩) আবার অনেক সময় আমরা, আমাদের কম্পিউটার এর বিভিন্ন হার্ডওয়্যার কে ওভারক্লকিং করে থাকি। ওভারক্লকিং এর জন্যও কম্পিউটার অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে।
৪) এছাড়াও আরো বিভিন্ন কারনে কম্পিউটার গরম হতে পারে।


ক্ষতিরোধকঃ

মাত্রাতিরিক্ত গরমের জন্য যেন কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার এর কোন ধরনের ক্ষতি না হয়, এ জন্য বিভিন্ন কম্পনেন্টের সাথে কিছু বিশেষ ধরনের যন্ত্র লাগানো থাকে, যাকে বলা হয়ে থাকে, থার্মাল সেন্সর। এদের কাজ হল, যখন কম্পিউটার এর কোন হার্ডওয়্যার তার কার্যকর তাপমাত্রার থেকে বেশি গরম হয়ে যায়, তখনই সেই হার্ডওয়্যার টিকে বন্ধ করে দেয়া, অথবা ইউজার কে জানানো যে, এই হার্ডওয়্যার টি গরম হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান কম্পিউটার প্রসেসর গুলোতে এই ধরনের থার্মাল সেন্সর লাগানো থাকে।


কম্পিউটার কুলিং এর কিছু পদ্ধতিঃ


এয়ার কুলিং

এই পদ্ধতিতে বাতাসের মাধ্যমে কম্পিউটার কে ঠান্ডা করা হয়ে থাকে। সাধারনত আমরা কম্পিউটারে যে ফ্যান গুলো ব্যাবহার করি সে গুলো বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস কম্পিউটার এর কেস এর মধ্যে প্রবেশ করায় এবং কেস থেকে গরম বাতাস গুলো কম্পিউটার কেস এর এয়ার চ্যানেল দিয়ে বাইরে বের করে দেয়।
এয়ার কুলিং পদ্ধতির জন্য আমরা বিভিন্ন সাইজের ফ্যান ব্যবহার করে থাকি যেমন; ৪০, ৬০, ৮০, ৯২, ১২০ এবং ১৪০ মিলিমিটার। তবে বর্তমানে, কিছু কিছু কম্পিউটার কেস এ ২০০ মিলিমিটার এর ফ্যান ব্যবহৃত হচ্ছে।





ডেক্সটপ এর ক্ষেত্রেঃ 


আমাদের ডেক্সটপ কম্পিউটার এ সাধারনত দুইটি ফ্যান থাকে, এর একটি পাওয়ার সাপ্লাই এর সাথে এবং একটি থাকে কম্পিউটার কেস এর পেছন দিকে। সাধারনত প্রায় সকল নির্মাতারা (হার্ডওয়্যার নির্মাতা) যেটা রেকমেন্ড করেন, তা হচ্ছে, কম্পিউটার কেস এর সামনের নিচের দিকে একটি যথেষ্ট বড় কুলিং ফ্যান। এবং কেস এর উপর দিকে এয়ার ভেন্টিলেশন সিস্টেম, যার মাধ্যমে, সামনে ফ্যান টি ঠান্ডা বাতাস নিয়ে ভেতর থেকে গরম বাতাস কে কেস এর উপর দিয়ে বের করে দিতে পারে।
এক্ষেত্রে একটি বিশেষ সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। কিছু কিছু কম্পিউটার কেস এ দুটি ফ্যান থাকে। যার একটি কেস এর সামনে এবং একটি পেছনে। এখন যদি সামনের ফ্যান টি যেই ভলিউম এর ঠান্ডা বাতাস কেস এর মধ্যে প্রবেশ করাচ্ছে, সেই হারে পেছনের ফ্যান টি যদি ভেতরের গরম বাতাস না বের করে দিতে পারে, তবে কম্পিউটার কেস এর মধ্যে বাতাসের চাপের তারতম্য ঘটতে পারে। একে বলা হয়ে থাকে পজিটিভ এয়ার ফ্লো। কিছু কিছু সময় সামান্য পরিমানের পজিটিভ এয়ার ফ্লো কম্পিউটার কেস এ বাইরে থেকে ধুলো বালি ঢুকতে বাধা দেয়। কিন্তু যদি এর বিপরীত ঘটনা ঘটে, যাদি নেগেটিভ এয়ার ফ্লো (যদি পেছনের ফ্যান টি যেই ভলিউম এ গরম বাতাস কেস এর মধ্যে থেকে বের করাচ্ছে, সেই হারে সামনের ফ্যান টি যদি ভেতরে ঠান্ডা বাতাস না প্রবেশ করাতে পারে) হয়ে যায়, তবে কম্পিউটার এর অপটিক্যাল ড্রাইভ গুলো তে বেশ কিছু সমস্যা সহ ধুলো বালি কম্পিউটার কেস এ ঢুকতে পারে।



সার্ভার এর ক্ষেত্রেঃ


আমাদের ডেক্সটপ কম্পিউটার এর কুলিং সিস্টেম আর একটি সার্ভারের কুলিং সিস্টেম এর মধ্যে এক বিশাল পার্থক্য দেখা যায়। ধরুন,  ডেক্সটপ টি অতিরিক্ত গরমে বন্ধ হয়ে গেল। কোন ঝামেলা নেই, কিন্তু হঠাৎ করে কথা নেই বার্তা নেই, আপনার সার্ভার টি যদি বন্ধ হয়ে যায় ? অথবা আপনার সার্ভারটির যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় ? এ সমস্ত বিষয় কে মাথা তে রেখে, সার্ভার এর কুলিং সিস্টেম টিকে তৈরী করা হয়েছে।
সার্ভার কে ঠান্ডা রাখার জন্য বাতাস কে সামনে থেকে টেনে এনে সার্ভার এর পেছন দিয়ে বের করে দেয়া হয়। আবার অনেক সময় সার্ভারের জন্য ব্লেড কেস ও ব্যবহৃত হয়। এর পেছনে মূল কারন থাকে, যখন সার্ভারের বিভিন্ন কম্পনেন্ট এর মাধ্যমে সার্ভার ভেতরে গরম হয়ে যায়, সে সময় গরম বাতাস উপরের দিকে উঠে যায়, এবং বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাস সার্ভারের ভেতরে প্রবেশ করে। এটা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এবং এভাবে কাঙ্ক্ষিত এয়ার ফ্লো পাওয়া সম্ভব। এবং বর্তমানের প্রায় সকল সার্ভার নির্মাতারাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন।



ল্যাপটপ এর ক্ষেত্রেঃ


কুলিং সিস্টেম কে সবচাইতে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে ল্যাপটপ কুলিং সিস্টেম। কেননা ল্যাপটপ যতবেশি ক্ষমতা সমপন্ন করা হবে, তাতে হিট জেনারেশন ততটাই বেশি হবে। কিন্তু এখানে আবার দুটো সমস্যা আছে। ল্যাপটপ এর আকার এবং এক ওজন। কম্পিউটার থেকে হিট বের করে দিতে হলে, তাতে যেমন ফ্যান এবং হিট সিঙ্ক ব্যবহার করা হয়, ল্যাপটপ এর ক্ষেত্রে সে পরিমান (সেই সাইজের) ফ্যান এবং হিট সিঙ্ক ব্যবহার করার জায়গা থাকে না। আবার যদি বড় মাপের হিট সিঙ্ক ব্যবহার করা হয়, তবে ল্যাপটপ এর ওজন ও আকার বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তবে বর্তমান  প্রসেসর গুলো লো পাওয়ার কম্পোনেন্ট। এই হার্ডওয়্যার গুলো তাদের সকল ক্ষমতা অপরিবর্তিত রেখেই খুব কম পাওয়ার এ চলার উপযোগী করে তৈরি করা। বর্তমানে ল্যাপটপ গুলিতে এক্সটারনাল কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।



আমার ব্লগ Copyright © 2011 - 2015 -- Blog Author Kalyan Kundu