ইন্টারনেটে আসক্তি অসুস্থতা কি না কিভাবে বুঝবেন

ইন্টারনেট হচ্ছে বর্তমান সময়ের তথ্যের মহাউৎস। ইন্টারনেটের কল্যাণে আজ এ পৃথিবীটা তার সীমানা ছাড়িয়ে একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে,দূরত্ব ও সীমানাকে মিশিয়ে দিয়ে বিশ্বকে বেঁধেছে একই সুতোই। আর মানব সমাজের জীবন যাত্রাকে করেছে সহজলভ্য। ইন্টারনেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ কমপিউটার নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটায় এবং সেই সময়টুকুর জন্য নিজেরাই মুল্য পরিশোধ করে। কমপিউটার ও ইন্টারনেট আজ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইন্টারনেটে কী আছে – সে প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে কী নাই – তার উত্তর দেওয়া অনেক সহজ। ইন্টারনেটকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা এখন প্রায় অসম্ভব। সংবাদ, তথ্য, যোগাযোগ, কেনাকাটা, ব্যবসা-বানিজ্য, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বিনোদন ইত্যাদি অনেক কিছুর জন্য মানুষ এখন ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু কেউ যদি ইন্টারনেটের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, ইন্টারনেটের কারণে যদি কারো স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয় এবং সিগারেট, মদ ও ড্রাগের মত ইন্টারনেটের প্রতি যদি কেউ আসক্ত হয়ে পড়ে তখনই সমস্যা। দেখা গেছে যে ৫-১০% ব্যবহাকারী ইন্টারনেট আসক্ত। এর সংখ্যা যে দিনদিন বাড়ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এক কথায় ইন্টারনেট আসক্তিকে প্রকাশ করা বেশ কঠিন ব্যাপার। ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে মানুষের যে ব্যাপক কৌতুহল, সার্বক্ষণিক চিন্তা, অদমনীয় ইচ্ছা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং অসংযত আচরণবোধ এসব কিছুকেই ইন্টারনেট আসক্তি বলা যায়।
কোন ধরনের লোকের ইন্টারনেটে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ?
১) যারা আগে থেকেই অন্য কোন কারণে Anxietyতে ভোগছেন।
২) যারা বিষন্নতায় বা একাকিত্বে ভোগছেন।
৩) যারা ড্রাগ, এলকোহল, জুয়াখেলা এবং বিকৃত যৌন রুচি ও মানসিকতায় আসক্ত।
৪) টিনএজার – যারা রোমাঞ্চপ্রিয় ও সব কিছুতে অতি উৎসাহী।
৫)  শারীরিকভাবে যারা অলস ও ঘরকুনো।
৬)  যারা কোন কিছুকেই হালকাভাবে নিতে পারে না, সব কিছুতেই সিরিয়াস।
৭)  বাস্তব জীবনে যাদের বন্ধু-বান্ধব খুবই কম ও বিপদ-আপদে সাহায্য করার মত কেউ নেই।
৮)  যারা অসামাজিক, লাজুক এবং মানুষের সাথে মিশতে ভয় পায়।
৯)  যারা বাস্তব জীবনের সমস্যাকে এড়িয়ে চলতে চায়।

ইন্টারনেট আসক্তির প্রধান কারণগুলো:

১। কৌতুহল ও উৎসাহ – ইন্টারনেটে নতুন ব্যবহারকারীদের অনেকেই ব্যাপক উৎসাহের সাথে প্রায় সব লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে সেখানে কী আছে। সাইট থেকে সাইটে ঘুরে ঘুরে নিত্য নতুন তথ্য-বিনোদনের আবিষ্কারে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে অনলাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়।
২। তথ্য নিয়ে হিমশিম খাওয়া – ইন্টারনেট এখন সব বয়সের ও সব পেশার লোকের জন্য এক বিশাল তথ্য ভান্ডার। পেশার কারণেই হোক বা সখের কারণেই হোক নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহের নেশা একজন মানুষকে এমনভাবে পেয়ে বসে যে সে বেশিরভাগ সময় ক্রমাগত ওয়েব পেজ হাতড়িয়ে পার করে দেয়। আর এভাবেই সে নিজের অজান্তেই সব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
৩। সাইবার পর্ণোগ্রাফী আসক্তি – এ ক্ষেত্রে একজন মানুষের মধ্যে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত চ্যাট রুম এবং সাইবার পর্ণের প্রতি আকর্ষণ বিশেষভাবে বেড়ে যায়। তার চিন্তা-ভাবনায় স্থান করে নেয় এ ধরনের নগ্ন ও বিকৃত রুচির সাইটগুলো। সাধারণত প্রথমদিকে কৌতুহল থাকলেও বেশিরভাগ লোকই পরবর্তীতে এগুলোতে আর আকর্ষণ বোধ করে না। এসবের প্রতি কারো কৌতুহল ও আকর্ষণ যদি স্থায়ীরুপ লাভ করে তখনই সমস্যা।বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার মধ্যে সাইবার পর্ণোগ্রাফী অন্যতম।
৪। কম্পিউটার আসক্তি – এ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির কম্পিউটার গেম, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সেটিং প্রভৃতির প্রতি আকর্ষণ আর নির্ভরতা এমন পর্যায়ে চলে আসে যে, সারাক্ষণ সে ওগুলো নিয়েই সময় কাটাতে পছন্দ করে। দিনে একাধিকবার ডেস্কটপের ব্যাকগ্রাউন্ড, স্ক্রীন সেভার ইত্যাদি পরিবর্তন করছে, একই গেম বারবার দিনের পর দিন খেলার পরও বিরক্ত হচ্ছে না, প্রয়োজন থাক আর না থাক নতুন নতুন প্রোগ্রাম ইনস্টল/আনইনস্টল করছে। এধরনের লোক relax হয়ে বসে থাকতে পারে না, কমপিউটার নিয়ে কিছু একটা করতে হবেই।
৫। ভার্চুয়াল বন্ধুবান্ধব – ইন্টারনেটের সুবাধে দুর-দুরান্ত, দেশ-বিদেশের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালোবাসা। ব্লগ, ফোরাম, চার্টরুম, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদিতে একজনের সাথে আরেকজনের পরিচয় হচ্ছে, বন্ধুত্ব হচ্ছে। সে কারণে ইমেইল, অনলাইন চাটিং, ফেসবুকে বন্ধুর তালিকা দিনদিন বড় হচ্ছে। সুতরাং যতই দিন যাচ্ছে ভার্চুয়াল বন্ধুবান্ধবদের সিডিউল দিতে অনলাইনে সময়ের পরিমানও বাড়ছে। আবার অনেকেই আছেন ডেটিং/ফ্রেন্ডশীপ সাইটের নিয়মিত ভিজিটর বা সদস্য, যারা জীবনসঙ্গী, যৌনসঙ্গী, প্রেমিক-প্রেমিকার সন্ধানে বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট হাতড়িয়ে পার করে দেয়।
৬। বিকল্প বিনোদন – ইন্টারনেটকে অনেকে বিকল্প বিনোদন হিসেবে বেছে নিয়েছে। গান, ভিডিও ক্লিপ, মুভি, নাটক, গেম, টিভি, ভিডিও, লাইভ খেলাধুলা ইত্যাদি অনেক কিছু এখন ইন্টারনেটে উপভোগ করা যায়। অনেকে এগুলোর প্রতি এত বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে যে জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজকে অবহেলা করতে শুরু করে। নতুন নতুন গান, ভিডিও, মুভি সংগ্রহের জন্য দিনরাত ইন্টারনেট হাতিয়ে বেড়াচ্ছে। যত পায় আরও চায় – এভাবে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা অনলাইনে ব্যয় করছে যা একসময় আসক্তির পর্যায়ে চলে আসে।
৭। বাস্তব জীবনে সমস্যা – সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার এইসব দিনরাত্রি নিয়ে আমাদের জীবন। সব দুঃখ-কষ্টকে সবাই একইভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে সমস্যা আসতে পারে। অনেকে এইসব দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যাকে ভুলে থাকার জন্য ইন্টারনেটকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়। এভাবে বাস্তব জীবনের সমস্যাকে ভুলতে গিয়ে আরও একটি সমস্যায় পতিত হয়, যার নাম ‘ইন্টারনেট আসক্তি’।
৮। ভার্চুয়াল জগতে প্রচার ও সেলিব্রেটি – ইন্টারনেটে সহজে নিজেকে প্রচারের জন্য অনেক সুযোগ, যেমন নিজস্ব ওয়েবসাইট, ব্লগ, ফোরাম, চার্টরুম, ফেইসবুক ইত্যাদি। তাই অনেকে দিনরাত এইসব সাইটে সক্রিয় থাকতে চাই, অন্যান্য অনলাইন ইউজারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এরা সবসময় সব ধরনের চেষ্টা করে। এদের কার্যকলাপ ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় ধরনের হতে পারে। এরা দৈনন্দিন জীবনের বিরাট একটি অংশ কাটিয়ে দেয় অনলাইনে। যখন অফলাইনে থাকে তখনও এরা অনলাইনের কার্যকলাপ ও চিন্তা-ভাবনায় মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে। অনলাইনে সবাইকে তাক লাগানোর জন্য বা সেলিব্রেটি হওয়ার জন্য নিত্য নতুন আইডিয়া নিয়ে সবসময় ভাবতে থাকে, ফলে বাস্তব জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনার আর সময় থাকে না।।
৯। প্রতারণা ও ধোকাবাজি- ইন্টারনেটে যেহেতু নিজের পরিচয় গোপন রেখে অনেক কিছু করা যায়, তাই এটা অনেকের কাছে ফন্দি-ফিকির ও প্রতারণার স্বর্গরাজ্য। অনেকে এসবের মাধ্যমে এক ধরনের আনন্দ পায়। এরা এসব উদ্দ্যেশ্যে এক ওয়েবসাইট থেকে আরেক ওয়েবসাইটে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায় এবং অনেক সময় সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ে। সমস্যা ।বর্তমান সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে ধোকা ওপ্রতারনার প্রবনতা সবচেয়ে বেশি|
১০। Status Update Anxiety (SUA) – ইন্টারনেটের কারণে সৃষ্ট নতুন মানসিক রোগ/সমস্যা সুয়া (SUA)। এ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তার পারিবারিক জীবন তো বটেই, বাস্তব জীবনের বন্ধুবান্ধব থেকেও বিছিন্ন হয়ে পড়ে। কেননা তার ধ্যান ধারণায় স্থান করে নেয় চ্যাট রুম, ব্লগ, ফোরাম, নিউজ গ্রুপ, ফেইসবুক, Twitter, Dopplr, My Space, Bedpost ইত্যাদির সুবাদে প্রাপ্ত ভার্চুয়াল জগতের নতুন নতুন বন্ধুবান্ধব। প্রতি মুহুর্তে ইন্টারনেটে নিজের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ঘটনা নিয়মিত অন্যদের সাথে শেয়ার করতে গিয়ে অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে এক ধরনের মানসিক চাপ। তারা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেটে প্রকাশ করতে চাই এবং অন্যদের উত্তর বা প্রতিক্রিয়া জানতে অধৈর্য হয়ে পড়ে। ফলে তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। এরা ইন্টারনেট ছাড়া বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। ধুমপানে অভ্যস্ত লোক যেমন ধুমপান করতে না পারলে চঞ্চল, বিষন্ন অথবা উত্তেজিত হয়ে ওঠে, তেমনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে এদের অবস্থাও তাই হয়।
ইন্টারনেট আসক্তির লক্ষণগুলো:
১। আপনি কি ইন্টারনেট নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তাভাবনা করছেন?
২। আগের অনলাইনের ঘটনাগুলো কিংবা পরবর্তীতে কী করবেন এসব চিন্তাই কি শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে?
৩। আপনি কি মনে করেছেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ভালো ফল পেতে হলে আপনার ইন্টারনেটের প্রতি মনোসংযোগ আরো বাড়িয়ে দিতে হবে?
৪। আপনি কি সাংসারিক ও সামাজিকভাবে সমূহ ক্ষতির সন্মুখীন হয়েও ইন্টারনেটের নির্ভরতা কমাতে পারছেন না?
৫। আপনি কি যতটুকু সময় অনলাইনে ব্যস্ত থাকা যায় তার চেয়েও বেশিক্ষণ অনলাইন ব্যবহার করে থাকেন?
৬। আপনি ইন্টারনেট নির্ভরশীলতার ব্যাপারে আপনার আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের কাছে সবকিছু গোপন করে যাচ্ছেন অথবা মিথ্যা বলছেন?
৭। আপনি কি হালকা হওয়ার জন্য অথবা সব সমস্যা, দুঃখ-কষ্ট ভুলবার জন্য ইন্টারনেটকে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে নিয়েছেন?
৮। আপনি যখন ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে আনা বা বন্ধ করার চেষ্টা করেন, সে সময় কি আপনি চঞ্চল ভাবপ্রবণ, বিষন্ন অথবা উত্তেজিত হয়ে উঠেন?
৯। আপনি কি ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিয়মিত ঘুমাতে পারছেন না?
১০। আপনি কি ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে শারীরিক ওজন কমা/বাড়া, মাথাব্যাথা, পৃষ্ঠবেদনা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা অনুভব করেন?
১১। আপনি কি ইন্টারনেটের প্রতি আপনার অদম্য আকর্ষণ কমিয়ে আনা বা ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে আনার একাধিক ব্যর্থ উদ্যোগ ইতিপূর্বে নিয়েছেন?
আপনি যদি উল্লিখিত এগারটির মধ্যে তিনটি লক্ষণও নিজের মধ্যে শনাক্ত করতে পারেন, তবে ধরে নেবেন আপনি ইন্টারনেটের অপব্যবহার করছেন। যদি পাঁচটি লক্ষণও নিজের মধ্যে শনাক্ত করতে পারেন, তবে ধরে নেবেন আপনার মাঝে ইন্টারনেট আসক্তি কাজ করছে।
প্রতিকার
১)  চিত্ত বিনোদনের অন্য উপায়গুলোর মাঝে নিজেকে পরিব্যপ্ত করা।
২)  পরিবারের সাথে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে আরো বেশী সময় দেয়া।
৩)  নিজের প্রকৃত দুঃখ-কষ্ট-সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা এবং তা দুর করার জন্য সচেষ্ট হওয়া।
৪)  নিজের সমস্যাগুলো নিজের মাঝে গুটিয়ে না রেখে আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধবের সাথে আলোচনা করা।
৫) ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে নিজের সহায়ক কাজেই একমাত্র ব্যবহার করা, নির্ভরতা যেন পারিবারিক বা সামাজিক গন্ডিকে অতিক্রম না করে।
৬) ড্রাগ, এলকোহল বা অন্য কোন মানসিক সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করা।
৭) বাস্তব জীবনে বেশি মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা। তখন ইন্টারনেটের সাথে সম্পর্ক কম থাকলেও চলবে।
৮) অসামাজিক, লাজুক বা ঘরকুনো স্বভাব থাকলে তা পরিবর্তন করা।
৯) প্রয়োজনে মানসিক বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়ে চিকিৎসা নেয়া।
১০) ধাপে ধাপে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ও গুরুত্ব কমিয়ে আনা:
ক) ইন্টারনেটে যেসব বিষয় ও সাইটে আপনি সময় কাটান সেগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করুন: দরকারী, কম দরকারী এবং বেদরকারী। প্রথম দিকে বেদরকারীগুলো বাদ দিন, এরপরে কম দরকারীগুলো বাদ দিন এবং তারপরে দরকারীগুলোতেও সময় কমিয়ে আনুন।
খ) যে সময় ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিবর্তে অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে তখন নেট ব্যবহার করবেন না। নেটে বসার আগেই সময়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন, সেই সময়টুকুর এক সেকেন্ড বেশিও ইন্টারনেটে থাকবেন না। এ ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে। মনে রাখবেন জীবনটা আপনার, সুতরাং আপনার লাইফস্টাইল কী হবে সে সিদ্ধান্তও আপনাকেই নিতে হবে।
ইন্টারনেটের সুফল ও ইতিবাচক দিক অনেক যা এখানে লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্তু সেই সুফল পেতে যেন ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং কর্মজীবনে নতুন কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় আমাদেরকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলো যেমন আমাদের জীবনকে আরো সহজ ও গতিময় করতে পারে, তেমনি এর খারাপ দিকগুলো আমাদের জীবনকে করতে পারে আরো জটিল ও বেদনাময়। “Prevention is better than cure.” সুতরাং শুরু থেকেই সাবধান। নতুন যে কোন কিছুতেই শুরুর দিকে মানুষের ব্যাপক কৌতুহল-উদ্দীপনা থাকে। একটা সময়ে এসে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। ইন্টারনেটও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কারো উৎসাহ-উদ্দীপনা যদি দিনদিন বাড়তে থাকে তখনই ভাবতে হবে এটা ইন্টারনেট আসক্তির পূর্ব লক্ষণ কিনা। ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাভাবিক সময়সীমা কতটুকু, তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কারণ ব্যক্তি বিশেষের পেশা ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে তা বিভিন্ন হতে পারে।

তথ্যসূত্র:
অস্বভাবিক মনোবিজ্ঞান,মানসিক ব্যাধির লক্ষণ,কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি-নীহাররঞ্জন সরকার।
মনের অসুখ-ড:শিবেন সাহা
ও ইন্টারনেট
 

আমার ব্লগ Copyright © 2011 - 2015 -- Blog Author Kalyan Kundu